১০৭ ধারার মামলা: কী, কেন, এবং করণীয় :
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১০৭ ধারা মূলত ফৌজদারি কার্যবিধি (CrPC) ১৮৯৮-এর ১০৭ ধারা হিসাবে পরিচিত। এটি জনশৃঙ্খলা রক্ষা ও শান্তি বজায় রাখার জন্য একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।
এটি তখনই প্রয়োগ করা হয় যখন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী দ্বারা ভবিষ্যতে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং এটি জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
১০৭ ধারার মামলা কী?
দণ্ডবিধির ১০৭ ধারা মূলত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যা পুলিশ বা প্রশাসন ব্যবহার করে অপরাধ ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করতে পারে।
যেসব ক্ষেত্রে ১০৭ ধারায় মামলা করা হয়:
✅ কোনো ব্যক্তি গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে সন্দেহ করা হলে
✅ দাঙ্গা-হাঙ্গামার আশঙ্কা থাকলে
✅ প্রাণনাশের হুমকি বা সহিংসতা ঘটার সম্ভাবনা থাকলে
✅ মৌখিক বা শারীরিক হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখালে
✅ পারিবারিক বিরোধ থেকে বড় সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে
১০৭ ধারার মামলার প্রক্রিয়া:
১. পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ: কেউ যদি অভিযোগ করেন যে আপনার কার্যকলাপ সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে, পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেট এটি খতিয়ে দেখবে।
2. শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ: ম্যাজিস্ট্রেট উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন এবং যদি সত্যতা পান, তাহলে আদেশ দেবেন।
3. সমঝোতা বা মুচলেকা: যদি ম্যাজিস্ট্রেট মনে করেন যে শান্তি বজায় রাখতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা প্রয়োজন, তাহলে ৬ মাস বা ১ বছরের জন্য শান্তি বজায় রাখার মুচলেকা দিতে পারেন।
কেন ১০৭ ধারায় মামলা করবেন?
আপনি যদি মনে করেন কেউ আপনার বা সমাজের শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে, তাহলে ১০৭ ধারায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন।
✅ যদি কেউ আপনাকে শারীরিক বা মানসিকভাবে হুমকি দেয়
✅ যদি পরিবারিক বা জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ থেকে সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
✅ যদি কেউ দাঙ্গা-হাঙ্গামার পরিকল্পনা করে
✅ যদি সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে
সাধারণত জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, পারিবারিক কলহ, প্রতিবেশীদের মধ্যে বিবাদ, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদির কারণে ১০৭ ধারায় মামলা করা হয়।
আপনার বিরুদ্ধে ১০৭ ধারায় মামলা হলে করণীয় কী?
১. আতঙ্কিত হবেন না, আইনিভাবে মোকাবিলা করুন
১০৭ ধারার মামলা কোনো ফৌজদারি অপরাধ নয়, এটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। তাই আতঙ্কিত না হয়ে আইনি সহায়তা নিন।
২. ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আপনার অবস্থান পরিষ্কার করুন
✅ আদালতে ব্যাখ্যা দিন যে আপনি কারও শান্তি বিঘ্নিত করেননি
✅ যদি অভিযোগ মিথ্যা হয়, প্রমাণ দিন বা স্বাক্ষী উপস্থাপন করুন
৩. মুচলেকা দিতে হতে পারে
ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন যে ভবিষ্যতে ঝামেলা হতে পারে, তাহলে আপনাকে ৬ মাস বা ১ বছরের জন্য মুচলেকা দিতে বলতে পারেন যে আপনি কোনো গোলযোগ করবেন না।
৪. উচ্চ আদালতে আপিল করুন
আপনার বিরুদ্ধে যদি অন্যায়ভাবে ১০৭ ধারায় মামলা করা হয়, তাহলে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করতে পারেন।
সারসংক্ষেপ
🔹 ১০৭ ধারার মামলা হলো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যা জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়
🔹 এটি ফৌজদারি অপরাধ নয়, বরং অপরাধ প্রতিরোধের একটি উপায়
🔹 আপনার বিরুদ্ধে মামলা হলে আতঙ্কিত না হয়ে আইনি পদক্ষেপ নিন
🔹 যদি অন্যায়ভাবে ১০৭ ধারার মামলা করা হয়, তাহলে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন
আপনার যদি ১০৭ ধারার মামলা সংক্রান্ত আরও প্রশ্ন থাকে বা আইনি সহায়তা প্রয়োজন হয়, তাহলে জানাতে পারেন!
No comments:
Post a Comment