বিদেশে থাকা স্বামীর মাধ্যমে দেশে থাকা স্ত্রীর তালাক প্রদান: আইনি পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া

 

বিদেশে থাকা স্বামীর মাধ্যমে দেশে থাকা স্ত্রীর তালাক প্রদান: আইনি পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া

যদি স্বামী বিদেশে অবস্থান করেন এবং স্ত্রী দেশে থাকেন, সেক্ষেত্রে ইসলামী আইন ও বাংলাদেশের পারিবারিক আইন অনুসারে তালাক প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। এটি কিছু নির্ধারিত পদক্ষেপ ও আইনি পদ্ধতি মেনে সম্পন্ন করতে হয়। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:


তালাকের সংজ্ঞা

তালাক হলো বৈধভাবে স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার একটি প্রক্রিয়া। ইসলামী আইন অনুযায়ী, এটি নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন মেনে কার্যকর করতে হয়।


স্বামী বিদেশে থেকে তালাক দিতে চাইলে করণীয়

১. তালাকের ঘোষণা

স্বামী যদি তালাক দিতে চান, তবে তিনি মৌখিক বা লিখিতভাবে তালাকের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন। তবে লিখিত তালাকনামা সবচেয়ে কার্যকর ও প্রমাণযোগ্য মাধ্যম।

২. তালাকনামা প্রস্তুত করা

স্বামীকে তার তালাকের ইচ্ছা একটি লিখিত নথিতে উল্লেখ করতে হবে। এতে তালাকের কারণ, স্ত্রীর নাম, ঠিকানা এবং বিবাহ সংক্রান্ত তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।

  • তালাকনামা বিদেশে যেকোনো নোটারি পাবলিক বা বাংলাদেশ দূতাবাস দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে।

৩. তালাক নোটিশ প্রেরণ

বাংলাদেশের পারিবারিক আইন (১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ) অনুসারে, তালাক কার্যকর করতে স্বামীকে তিন মাস আগে একটি লিখিত নোটিশ প্রদান করতে হয়।

  • তালাক নোটিশের প্রাপকদের তালিকা:
    1. স্ত্রী
    2. স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান/মেয়র
    3. সংশ্লিষ্ট সালিশি পরিষদ

নোটিশে তালাকের কারণ উল্লেখ করতে হবে এবং এটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

৪. আরবিট্রেশন (সমঝোতার চেষ্টা)

তালাকের নোটিশ পাঠানোর পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ (উপজেলা চেয়ারম্যান বা মেয়র) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতার জন্য সালিশি বৈঠক ডাকতে পারে।

  • যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো সমঝোতা না হয়, তাহলে তিন মাসের সময়সীমার শেষে তালাক কার্যকর হবে।
  • সমঝোতার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় না।

৫. তালাক কার্যকরের সময়সীমা

  • তালাকের নোটিশ পাঠানোর তিন মাস পর এটি কার্যকর হবে, যদি এর মধ্যে সমঝোতা না হয়।
  • যদি স্ত্রী গর্ভবতী হন, তবে তার সন্তান জন্ম না দেওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না।

৬. তালাক রেজিস্ট্রেশন

তালাক কার্যকর হওয়ার পরে এটি রেজিস্ট্রার অফিসে নথিভুক্ত করতে হয়। তালাক রেজিস্ট্রেশন না হলে আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না।


আইনি ও সামাজিক দিক

১. দেনমোহর পরিশোধ

  • ইসলামী আইনে তালাকের সময় স্বামীকে দেনমোহরের বকেয়া অংশ পরিশোধ করতে হয়।
  • এটি স্ত্রীর অধিকার এবং তালাক কার্যকরের শর্ত।

২. সন্তানদের ভরণপোষণ

  • যদি স্বামী-স্ত্রীর সন্তান থাকে, তবে সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব সাধারণত স্বামীর ওপর থাকে।
  • এটি আলাদা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হতে পারে।

৩. স্ত্রীর অধিকার সুরক্ষা

  • স্ত্রী যদি তালাকের বিরোধিতা করেন বা তার অধিকার লঙ্ঘিত হয়, তবে তিনি পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।
  • স্বামীর তালাকের কারণ যদি ন্যায়সঙ্গত না হয়, তবে আদালত সেই তালাক বাতিল করতে পারে।

তালাকের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ও সামাজিক নির্দেশনা

ইসলামী আইন অনুসারে তালাকের নিয়ম

ইসলামী আইন অনুযায়ী, তালাকের আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতার জন্য তিনটি ধাপ পালন করা হয়:

  1. নাসিহা (পরামর্শ): দ্বন্দ্ব মীমাংসার জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আলোচনা এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা।
  2. আরবিট্রেশন: সমঝোতা সম্ভব না হলে উভয় পরিবারের প্রতিনিধি বা সালিশিদের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা।
  3. তালাক: সমঝোতা ব্যর্থ হলে বৈধভাবে তালাক ঘোষণা করা।

সামাজিক প্রভাব

তালাক একটি বৈধ প্রক্রিয়া হলেও এটি সামাজিকভাবে অনেক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই ধৈর্য ধরে, পারস্পরিক সম্মান রেখে এবং ধর্মীয় নির্দেশনা মেনে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।


বিদেশে অবস্থানকালীন তালাক প্রক্রিয়ার বিশেষ দিক

১. দূতাবাসের মাধ্যমে তালাক প্রক্রিয়া

  • বিদেশে থাকা স্বামী বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে তালাকনামা প্রেরণ করতে পারেন।
  • দূতাবাস তালাকনামা সত্যায়িত করে দেশে পাঠাবে।

২. প্রতিনিধি নিয়োগ

  • স্বামী তার পক্ষে দেশে একজন প্রতিনিধি (আত্মীয় বা আইনজীবী) নিয়োগ করতে পারেন। প্রতিনিধি তার হয়ে তালাক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।

৩. ইলেকট্রনিক যোগাযোগ

  • তালাক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ইমেইল, ভিডিও কল বা পোস্টাল মাধ্যমে তথ্য বিনিময় করা যেতে পারে।

আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যেসব তথ্য প্রয়োজন

  1. বিবাহ নিবন্ধন সনদ (কাবিননামা)
  2. স্ত্রীর নাম, ঠিকানা ও পরিচয়পত্র
  3. স্বামীর পরিচয়পত্র ও বর্তমান ঠিকানা
  4. তালাকনামা (লিখিত নথি)
  5. তালাকের কারণ সম্পর্কিত তথ্য

উপসংহার

বিদেশে থেকে তালাক দিতে চাওয়া একটি সংবেদনশীল ও আইনি প্রক্রিয়া, যা স্বামী ও স্ত্রীর উভয়ের অধিকার এবং দায়িত্বের প্রতি সম্মান রেখে সম্পন্ন করা উচিত। সঠিক নিয়ম মেনে এবং আইনি সহায়তা নিয়ে কাজ করলে এই প্রক্রিয়া সহজ এবং গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

আপনার যদি তালাক প্রক্রিয়া নিয়ে আরও নির্দিষ্ট পরামর্শ বা সহায়তা প্রয়োজন হয়, তাহলে একজন দক্ষ পারিবারিক আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন।

No comments:

Post a Comment

Featured post

F-22 Fat Burner by Just Potent :: All-Natural Fat Burner Supplement :: Specially Formulated for Fat Burning, Appetite Suppression, Metabolism, and Energy Enhancement :: 2 Month...

About the Product Potent and powerful fat burner with unsurpased thermogenic effect* Supercharge your metabolism* Research backed and cli...